জান্নাতে বাড়ি বানানোর দশটি সহজ উপায়

কখনো কি এমন হয়েছে যে, টিভিতে বা পেপারে অথবা কোথাও বেড়াতে গিয়ে এমন কোনও প্রাসাদ দেখলেন যা আপনার মন ভরিয়ে দিলো? আপনার মনে হলো, আপনার নিজের বাড়ি তো এই প্রাসাদের তুলনায় কিছুই না! এমনকি যদি আপনি আলিশান বাড়িতেও থাকেন, তবেও তো এমন হয়, আরো সুন্দর বাড়ি দেখে তার প্রতি মনে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। মনে হয়, “ইশ! আমার যদি এরকম একটি বাড়ি থাকতো!” এটিই দুনিয়ার জীবনের সীমাবদ্ধতা। দুনিয়ার সুখগুলো ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতেই।

আখিরাতের তো হিসাবই আলাদা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান দুনিয়ার যেসব বস্তুর উপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।[১]

দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য তো জান্নাতের একটি ইটের দামেরও সমান হবে না। জান্নাতে রোগ-শোক নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।

আমরা দুনিয়া সাজাতে কত পরিশ্রম করি, অথচ জান্নাতের বাড়ি তো কত সহজেই বানানো যায়। শুধু ইচ্ছা আর জ্ঞানের অভাবে আমরা নিজেদের বঞ্চিত করছি। আজ জান্নাতে বাড়ি বানানোর কিছু উপায় বলে দেই।

১. সূরা ইখলাস দশবার পড়লে-

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“যে ব্যক্তি সূরাহ ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দিবেন।”[২]

২. আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মাসজিদ বানিয়ে দিলে–

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিওবা তা চড়ুই পাখির বাসার মতো হয় বা আরো ছোট হয়, তবুও আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দিবেন।”[৩]

মসজিদ বানাতে হবে মানেই এটি নয়, আলিশান প্রাসাদের মতো এসি মসজিদ হতে হবে। মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাত করার জন্যে নির্দিষ্ট একটূকরো জায়গা। দেশের অনেক দরিদ্র এলাকায় এখনো মানুষ মসজিদ বানাতে/সংস্কার করতে পারে না অর্থাভাবে, সেগুলোতে অনুদান দিয়ে জান্নাতে নিজের জন্যে বাড়ি সহজেই বানাতে পারেন।

৩. বারো রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা সালাত পড়লে–

সুন্নাতে মুয়াক্কাদা সালাত হলো ফজরের ফরয সালাতের আগে ২ রাক’আত, যুহরের ফরয সালাতের আগে ৪ আর পরে ২ রাক’আত, মাগরিবের ফরযের পরে ২ রাক’আত আর ‘ইশার ফরযের পরে ২ রাক’আত সুন্নাত সালাত।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“এমন কোনও মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরয নামাজ ছাড়াও বারো রাক’আত অতিরিক্ত সুন্নাত (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) সালাত পড়ে আর আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।”[৪]

৪. জামাতে সালাতের সময় খালি কাতার পূর্ণ করলে–

সুবহানাল্লাহ! জামায়াতের সময় মাসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি বা সারির মাঝে ফাঁক দেখি। কিন্তু আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, আমরা অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে ভরাট করবে।

অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“যে ব্যক্তি জামায়াতের সালাতে খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন এবং জান্নাতে তার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করে দিবেন।”[৫]

৫. সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে–

৬. মজা করেও মিথ্যা কথা না বললে–

৭. উত্তম আখলাক বজায় রাখলে–

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।”[৬]

৮. বাজারে প্রবেশের সময় দু’আটি পড়লে–

বাজারকে দুনিয়ার নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবার বাজারে প্রবেশের দু’আয় রয়েছে অনেক ফযিলত। যা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দু’আটি) পড়বে, আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গুনাহ মাফ করে দেন। আর ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।”[৭]

বাজারে প্রবেশের দু’আ

[লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকালাহু লাহুল-মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহঈ ওয়াইয়ুমীতু ওয়াহুয়া হায়্যুন লা ইয়ামূতু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।]

অর্থ: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মারেন। আর তিনি চিরঞ্জীব, মারা যাবেন না। সকল প্রকার কল্যাণ তাঁর হাতে নিহিত। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

৯. সন্তান মারা গেলে সবর করলে–

নিঃসন্দেহে সন্তানের মৃত্যু আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা। যেই বাবা-মা এই কঠিন পরীক্ষা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করবেন, তাঁদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল প্রতিদান রয়েছে।

আবু মুসা আল-আশআরি রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

যখন কারও সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদেরকে ডেকে বলেন, “তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবয করে ফেলেছো?” তাঁরা বলেন, “হ্যাঁ।” আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা তার কলিজার টুকরার জান কবয করে ফেলেছো?” তাঁরা বলেন, “হ্যাঁ।” আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আমার বান্দা কী বলেছে?” তাঁরা বলেন, “আপনার বান্দা এই বিপদেও ধৈর্য ধারণ করে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজি’উন পড়েছে।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং তার নামকরণ কর ‘বাইতুল হামদ’ অর্থাৎ প্রশংসার গৃহ।”[৮]

১০. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করলে–

আমর বিন মালিক আল জানবি থেকে বর্ণিত যে তিনি ফাদালাহ বিন উবাইদ থেকে শুনেছেন,

আমি রাসূলুল্লাহকে ﷺ বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন,

“আমি হচ্ছি একজন যা’ঈম। আর যা’ঈম হচ্ছে জামিনদার তার জন্যে, যে আমার উপর ঈমান আনবে এবং ইসলাম কবুল করবে এবং হিজরত করবে; তার জন্যে জান্নাতের প্রান্তদেশে একটি বাড়ি আর জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি। আর আমি হচ্ছি জামিনদার তার জন্যে, যে আমার উপর ঈমান আনবে এবং ইসলাম কবুল করবে ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ লড়বে; তার জন্যে জান্নাতের প্রান্তদেশে একটি বাড়ি, জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি এবং জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি।”…[৯]

তথ্যসূত্র ও গ্রন্থাবলি
[১] সহীহুল বুখারী ২৭৯৩,৩২৫৩,৪৮৮১, মুসলিম১৮৮২,২৮২৬।
[২] আল জামি আস সাগীর, ১ম খণ্ড, ১১৪২ পৃ.।
[৩] ইবন মাজাহ, ৭৩৮। আল জামি আস সাগীর, ১ম খণ্ড, ১১০৮ পৃ.।
[৪] সহীহ আত তারগ্বীব, ১ম খণ্ড, ১৪০ পৃ.
[৫] সহীহ আত তারগ্বীব, ১ম খণ্ড, ৩৩৬ পৃ.
[৬] আবু দাউদ আস-সুনান ৪/২৫৩; হাদীস নং ৪৮০০।
[৭ ] সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ২২৩৫। তিরমিযি ৩৪২৮।
[৮] রিয়াদুস সালেহীন হাদীস ১৩৯৫, জামে’ আত-তিরমিযী।
[৯] সুনানে নাসাঈ, ৩১৩৩।

আল্লাহ তাকে ও তার পরিবারকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন

লিখেছেন: আলেমা কারীমা তাবাসসুম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *