ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি
গোসলের ফরজ তিনটি :
১. ভালোভাবে কুলি করা। (সুরা মায়িদা : ৬)
গড়গড়াসহ কুলি করা সুন্নাত। তবে রোজাদার হলে গড়গড়াসহ কুলি করা যাবে না, শুধু কুলি করবে।
২. নাঁকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। (সুরা মায়িদা : ৬)
নাকের মধ্যে শুকনো ময়লা থাকলে তাও পরিষ্কার করবে। তবে রোজা অবস্থায় শুধু নাকে পানি দিবে, নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছানো যাবে না।
৩. সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ, যেন কোথাও এক চুল পরিমাণ শুকনো না থাকে। (সুরা মায়িদা :৬, তিরমিজি ১০৩, আল–বাহরুর রায়িক ১/৪৫, ফাতাওয়ায়ে শামি ১/১৫১, হিদায়া ১/২৯)
ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি ও সুন্নাত তরিকা :
গোসলের আগে ইসতিনজা সেরে নেবে। এতে বীর্য ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বের হওয়া সহজ হয়।
১. শুরুতে নিয়ত করবে এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়বে। (বুখারি : ২৪৮)
[বি.দ্র. গোসলখানা ও টয়লেট একত্রে হলে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ মুখে পড়া যাবে না।]
২. দুই হাত কবজি পর্যন্ত পৃথকভাবে তিনবার ধুয়ে নেবে। (বুখারি : ২৪৮)
৩. এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা তিনবার ধুয়ে পরিষ্কার করবে। (মুসলিম : ৩২১)
৪. নাপাকি লেগে থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় লজ্জাস্থান ধুয়ে নেবে এবং এরপর উভয় হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলবে। (বুখারি : ২৪৯)
৫. তারপর নামাজের অজুর মত ভালোভাবে অজু করবে, তবে পা ধোবে না। গোসলের শেষে ধুয়ে নেবে। (বুখারি : ২৫৭-২৫৯)
৬. অতঃপর পুরো শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে মাথায় পানি ঢালবে। (বুখারি : ২৫৬)
৭. তিনবার ডান কাঁধে তারপর তিনবার বাম কাঁধে পানি ঢালবে। (বুখারি : ২৫৪)
৮. পুরো শরীর ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো পশমও যেন শুকনো না থাকে। (বুখারি : ২৭৪, আবু দাউদ : ৪৯, ইবনু আবি শাইবা : ৮১৩)
তবে সাগর, নদী, পুকুর ইত্যাদিতে গোসল করলে কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকলে তিন বার পানি ঢালার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। (আবু দাউদ : ২৪৯, ইবনু আবি শায়বা : ৮১৩)
৯. সমস্ত শরীর হাত দ্বারা ঘষে মেজে ধুয়ে নেবে। (তিরমিজি : ১০৬)
১০. নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। সব শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুয়ে নেবে। (হিদায়া : ১/৩০)
১১. উঁচু স্থানে বসে গোসল করবে, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে নাপাকির ছিটা না লাগে। পানির অপচয় না করে, বসে বসে গোসল করবে। লোকসমাগমের স্থানে গোসল করবে না। নাপাকি থেকে পবিত্র এমন জায়গায় গোসল করবে। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/৯৪)
১২. বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না। (আবু দাউদ : ২৫৯, শারহু মুখতাসারুত তহাবি ১/৫১০)
১৩. নেইলপলিশ (Nail polish), রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরের ত্বকে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে (অর্থাৎ, ত্বকে) পানি পৌঁছানো জরুরি, অন্যথায় গোসল শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩)
১৪. ফরজ গোসলে পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়াসহ সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে।
নারীদের চুল বাঁধা থাকলে, তা খোলা ছাড়াই যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে না খুলে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। আর যদি চুল খোলা থাকে তাহলে পুরুষের মতো চুলের গোড়াসহ সম্পূর্ণ চুল ধোয়া ফরজ। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/১৪২)
১৫. ফরজ গোসলে নারীদের কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল–মুহিতুল বুরহানি ১/৮০)
কানের ভেতর ও নাভিতে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জরুরি।
১৬. গোসলের ভেজা কাপড় বালতি বা এধরনের ছোট পাত্রে ধোয়া হলে কমপক্ষে তিনবার ধুয়ে তিনবার নিংড়াবে, যেন নাপাকির চিহ্নমাত্র না থাকে।
তবে নাপাকি লেগে থাকা কাপড় যদি প্রবহমান পানি যেমন, নদী, পুকুরে বা ট্যাপের পানিতে এতো বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায় – তাহলে তা পাক–পবিত্র হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তিনবার নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়।
(রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৩, আল–বাহরুর রায়িক ১/২৩৭, ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া ২/৫৭৪, জামিউল ফাতাওয়া ৫/১৬৭)
এটাই হচ্ছে গোসলের পরিপূর্ণ সঠিক পদ্ধতি।
[বি. দ্র. অনেকই মনে করেন গোসল শেষে নামাজ পড়তে চাইলে আবার নতুন করে অজু করতে হবে – যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে গোসল করলে গোসল শেষে নামাজ পড়তে চাইলে আবার নতুন করে অজু করা লাগবে না। তবে গোসলের মাঝেই যদি অজু ভাঙার কোন কারণ পাওয়া যায় তাহলে গোসল শেষে আবার অজু করতে হবে।]
আল্লাহর আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।