ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল পর্দা!

বেশির ভাগ মেয়েরা এখন হিজাব এবং বোরকা ছাড়া ঘর থেকে বেরই হয় না। আর এখন মেয়েদের বোরকা ও হিজাব নামে চলে এক বিশাল ধরনের ভন্ডামি।

হিজাব মানে কি?
১৫/২০ প্যাচ দিয়ে মাথাতে বাঁধাকপি ফুলকপি তৈরী করার নাম হিজাব না! হিজাব মানে পর্দা। যা পালন করা ফরজ এবং যার বিধান স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক দিয়েছেন এবং যেভাবে দিয়েছেন সেই ভাবেই পালন করতে হবে। টাইট ফিট ড্রেস পরে মাথায় পট্টি বাঁধার নাম হিজাব না। মাথায় পট্টি বেঁধে বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে ঘুরাঘুরি করা, ইটিশ পিটিশ করার নাম হিজাব না। মাথায় পট্টি বেঁধে ধার্মিক সেজে ফেইসবুকে প্রোফাইল পিক দিয়ে, লাইক পাওয়ার জন্য নিজেকে শো অফ করার নাম হিজাব না। মাথার মধ্যে ২০ পাক কাপড় দিয়ে চুল ঢেকে, মুখ ও বুক পিঠে কাপড় না দেওয়ার নাম হিজাব না। ১০ জাতের অকর্ষণীয় রং বেরং এর ক্লিপ মেরে মাথায় কাপড় লাগানোর নাম হিজাব না। এগুলো হল একপ্রকার নষ্টামি, নোংরামি ও বেহায়াপনা।

বোরকা ও হিজাব পরার কারন কি?
বোরকা ও হিজাব পরার কারন হল যথাসম্ভব বেশি নিজেকে ঢেকে রাখা এবং নিজেকে অন্যের কাছে আকর্ষণীয় না করা। কিন্তু আজকের মেয়েদের বোরকা ও হিজাবের কাহিনী দেখলে মনে হয়, মধুহীন ফুলে আলগা রং ও মধু লাগিয়ে নিজেকে আকর্ষণীয় করে, সবাইকে তার প্রতি ডাকছে। এতে কাকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে? আল্লাহ পাক উনাকে, নাকি নিজে কে? নাকি পুরো মুসলিম উম্মাহকে? নিজের সম্মান ও লজ্জাবোধ না থাকলে যা হয়।

অনেকে বলে, আমার স্টাইল আমি করি! আবার কেউ কেউ বলে মনের পর্দাই বড় পর্দা! এই কথা বলে মুসলিম উম্মাহকে কি করে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে একবার ভেবে দেখুন!

প্রথমত, আপনার বদমাইশি লুক এর কারনে সাধারন মুসলিম ভাইদের চোখের যিনা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আপনি যখন এই স্টাইলিশ বোরকা ও হিজাব লাগিয়ে নোংরামি করবেন তখন তা বিধর্মীদের জন্য হবে ধরালো হাতিয়ার। তারা তখন বলবে তোমাদের মুসলিম মেয়েরা তো বোরকা পড়ে খারাপ কাজ করে। আর তা হবে খাটিঁ মুসলিম ধার্মিক নারীদের জন্য খুবই কষ্টকর কথা।

তোমাদের এইসব ফাইজলামি মার্কা হিজাবি লুক, আমাদের সত্যিকারের পর্দাশীল মমতাময়ী বোনদেরকে অপমানিত করে। জাতি আজ লজ্জিত। সভ্যতা আজ কলঙ্কিত। তোমাদের মতো ফাজিলদের জন্য, আজ যারা মহান আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য পর্দা পালন করে, তাদেরকে ও লোকজন বাঁকা চোখে দেখে।

”উম্মে খাল্লাদ নামের এক মহিলা সাহাবী তার সদ্য শাহাদাত বরণকারী সন্তান সম্পর্কে জানার জন্য রসূলের দরবারে এলেন। তার চেহারা নেকাবে ঢাকা ছিল। এক সাহাবী তাকে বললেন, তুমি তোমার শাহাদাতবরণকারী সন্তান সম্পর্কে জানতে এসেছ, (আর এমন শোকের মূহূর্তেও) তোমার চেহারা নেকাবে ঢাকা!
তখন সাহাবিয়্যা উত্তরে বললেন, ‘‘সন্তান হারিয়েছি, লজ্জা হারাইনি’’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীসঃ ২৪৮৮]

আবার এখনকার হাল ফ্যাশনের বোরকার কথা আর কি বলবো? বোরকা নাকি বাদুড় বোঝার উপায় নাই (নাউজুবিল্লাহ) এ ছাড়াও রয়েছে একটা হাফ প্যান্ট এর মতো হাটু পর্যন্ত টাইট কাপড় আর নিচে হাল ফ্যাশনের লেগিংস বা জিন্স ।

হিজাব করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এমনভাবে নিজেকে ঢেকে রাখা যেন নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ না পায়, বংগদেশের অনেক হিজাবী ললনা এই বিষয়টা বুঝতে পারে না, তারা ঢেকেঢুকে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশে মনযোগী হয়। কোন রকমে এক টুকরো “কাপড় টেনে দেওয়া” টা হিজাবে উদ্দেশ্য না, কারণ কেউ চাইলে ঢেকেঢুকেও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারে।

এখানে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ হতে না দেওয়া, কাপড় টেনে এই কাজটা করতে হয়। সৌন্দর্য প্রকাশ না করাটা হল লক্ষ্য, আর কাপড় জড়ানোটা হচ্ছে সেই লক্ষ্য অর্জনের উপায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ “তোমরা জাহেলিয়াত যুগের ন্যায় তোমার সৌন্দর্যকে প্রদর্শন না করে নিজ ঘরে অবস্হান কর । [সূরা আহযাব-৩৩]

অতি সাম্প্রতিক সময়ে খিমার নামে আরও একটা ফেতনা বের হয়েছে! তাতে কতটুকু পর্দা রক্ষা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়! অথচ বোরকা – হিজাব – চাদর – রুমাল – ওড়না সব কিছুর উদ্দেশ্য একই : সৌন্দর্য ঢেকে রাখা, আর আজকাল হচ্ছে উল্টা টা! বোরকা হলো মহিলাদের এক ধরনের বহিরাঙ্গিক পোশাক যা সারা শরীর ঢেকে রাখে। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী পর্দা বজায় রাখার স্বার্থে মুসলিম নারীরা ঘরের বাইরে, বিশেষ করে পুরুষমহলে যাওয়ার সময় এটি পরিধান করে থাকে।

আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছেন- ”হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, তোমার কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়” – [সূরা আহযাব : ৫৯]

এই কথার অর্থ হল, সকল নারীরা সমস্ত শরীর ঢেকে বোরকা পরিধান করবে। এখন দেখা যায়, কিছু বুড়ি মহিলা ভালভাবে বোরকা পরিধান করে আর যুবতি নারীরা রংবেরঙের কাপড় পরিধান করে। আর যারা বোরকা পরে তারাও বোরকা নিজের মন মত পরে। যেমন তারা বোরকা এমনভাবে টাইট করে বানিয়ে নেয় যে তাদের পুরো শরীরের অববয় বাহির থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আবার অনেকে মুখ না ঢেকে বোরকা পরিধান করে। ঠোট চোখ কত যে সুন্দর করে সাজায়, যেন চোখ ফেরানোই দ্বায়।। এতে পুরুষের আকৃস্ট হয় বেশি। অথচ বোরখা পুরুষের নজর থেকে নিজের চেহারাকে হেফাযত করার জন্য।। আর এরাই তো পোশাক পরিহিত উলংগ নারী।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুই প্রকার জাহান্নামী মানুষ আসবে যাদেরকে আমি দেখিনি। এক প্রকার হচ্ছে ঐ সকল লোক যাদের কাছে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকিবে তা দিয়ে তারা মানুষকে আঘাত করবে। আরেক প্রকার হচ্ছে ঐ সকল নারী যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ থাকবে। তারা (সাজ-সজ্জা করে) পর পুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও অন্য পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট থাকবে। তাদের মাথার খোপা (সাজ সজ্জা ও ফ্যাশানের দরুণ) উটের কুঁজের মত এদিক ওদিক হেলানো থাকবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি পাঁচশ বছর রাস্তার দূরত্ব থেকেও অনুভব করা যাবে।” –[সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৫৭০৪]

“কাপড় পড়েও উলঙ্গ” হচ্ছে সেই সমস্ত নারী, যারা পাতলা কাপড় পরিধান করে। ফলে কাপড়ের মধ্য দিয়ে তাদের গায়ের চামড়া দেখা যায় অথবা এমন টাইট পোশাক পরে যার কারণে তাদের শরীরের আকৃতি বোঝা যায়। আবার তারাও যারা পরিপূর্ণ পর্দা না করে পর্দার নামে ফ্যাশন করে বিভিন্ন ডিজাইনের টাইট ফিটিং বোরকা পড়ে যার ফলে তাদের শরীরের আকৃতি স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠে।

সুতরাং হে প্রিয় মুসলিম নারী! আপনি কি এরপরও সাবধান হবেন না? এরপরও কি পরিপূর্ণ পর্দা করে চলবেন না? এরপরও কি বিভিন্ন ডিজাইনের আকর্ষণীয় টাইট ফিটিং বোরকা পড়বেন? মনে রাখাবেন বোরকা পড়ার অর্থ আপনার সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখা। বোরকা পড়ার অর্থ সৌন্দর্যকে আরও বেশি ফুটিয়ে তোলা নয়। সুতরাং আজ থেকেই নিজেকে বদলিয়ে ফেলুন। এমন ঢিলে ঢালা বোরকা পরিধান করুন যেন আপনার সৌন্দর্য তো দুরের কথা বরং আপনার শরীরের আকৃতি এক বিন্দু পরিমাণও বোঝা না যায়। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুক। -আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন!

লেখক: মোঃ নিয়ামত আলী নয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *