
আমাদের মধ্যে অনেকের জানা নেই গোসল ফরয কেন হয় অনেকেই ফরয গোসলের সঠিক নিয়ম জানেন না আবার সংকোচে কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারেন না।
না জানার কারলে অসংখ্য মুসলিম ভাই-বোনের
সালাত সহ নানা আমল কবুল হয় না যেটা ঈমানের ক্ষেত্রে চরম ভয়ানক ব্যাপার।
______________
গোসলের ফরয ৩টিঃ
১। গড়গড়া সহ কুলি করা।
২। নাকে ভালোভাবে পানি দেওয়া।
৩। সমস্ত শরীর ধৌত করা।
___________
গোসলের সুন্নাত সমুহঃ
* গোসলের নিয়ত করা ।
* তিনবার কুলি করা সুন্নাত
* তিনবার নাক পরিষ্কার করা সুন্নাত ।
* গোসলের শুরুতে দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া ।
* অজু করা ।
* পেশাব পায়খানার রাস্তা পরিষ্কার করা ।
* শরীরের কোন স্থানে নাপাকী থাকলে তা ধোয়া ।
* শরীরে প্রতিবার পানি ঢেলে ভাল করে ঘষে
পরিষ্কার করা।
* পানি জমে থাকে এমন স্থানে গোসল করলে গোসলের
পর সেই স্থান থেকে সরে গিয়ে পা ধোয়া ।
* প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার না করা।
_
____________
গোসল ফরয হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
* জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত বীর্যপাত হওয়া। কিন্ত নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব না হয়ে বীর্যপাত হলেও গোসল করা ফরয। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না।তবে যে কাপড় পরে শোয়া হয়েছে সে কাপড়ে বীর্যের চিহ্ন না দেখা গেলে গোসল ফরয হয় না
* স্ত্রী সহবাস। সহবাসের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর
লজ্জাস্থান একত্রিত হলেই গোসল করা ফরয হয়ে যাবে, স্বামী অথবা স্ত্রীর বীর্যপাত হোক বা না হোক।
* নারীদের হায়েয (মাসিক) হবার পর যখন রক্ত বন্ধ হয় তখন তাদের জন্য গোসল ফরয হয়।
* নারীদের নেফাসের (সন্তান প্রসবের পরের
স্রাব)রক্তস্রাব বন্ধ হবার পর গোসল ফরয হয় ।
* হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত হলেও গোসল করা ফরয হয়ে যাবে। উল্লেখ্য হস্তমৈথুন হারাম ও কবীরা গুনাহ।
____________
যেসব কারনে গোসল করা ফরয হয় নাঃ
* যদি কোন রোগের কারনে ধাতু পাতলা হয়ে বা কোন আঘাতে বিনা উত্তেজনায় ধাতু নির্গত হলে গোসল ফরয হয় না ।
* স্বামী স্ত্রী যদি লিঙ্গ স্পর্শ করে ছেড়ে দেয়, ভিতরে
প্রবেশ না করায় এবং বীর্যপাতও না হয় ৷ তবে গোসল ফরয হবে না ৷
* শুধু মযী বের হলে অজু ভেঙ্গে যায় , গোসল ফরয হয় না ।
* ঘুম থেকে ওঠার স্বপ্ন মনে আছে, কিন্ত কাপড়ে বা
শরীরে বীর্যের কোন চিহ্ন না পাওয়া গেলে গোসল
ফরয হয় না ।
*যৌন উত্তেজনার কারণে মযী (পানির মত পাতলা বীর্য যা অল্প পরিমানে বের হয়, কিন্তু উত্তেজনা হ্রাস হয়না) বের হলে ওযু ভাংবে, কিন্ত গোসল করা ফরয হবেনা।
কারো মযী বের হলে, প্রস্রাব যেমন শরীর বা কাপড়ে
লাগলে তা ধুয়ে পাক করতে হয়, তেমনী মযী শরীরে বা কাপড়ে লাগলে শরীর ও কাপড় ধুয়ে পাক করতে হয় ৷মযী শুকিয়ে গেলে কিছুই করতে হবেনা, ঐ কাপড়েই নামায পড়তে পারবে।আর উত্তেজনার সাথে মনী (ঘন আঠালো সাদা বীর্য)বের হলে ওযু-গোসল দুটোই ফরয হয়।
উল্লেখ্য যে, বীর্য (মনী), মযী ও অদীর মধ্যে পার্থক্য
আছে ৷ যৌন মিলনের সময় অথবা হস্তমৈথুন করার সময় চরম উত্তেজনায় তৃপ্তি হবার প্রাক্কালে অথবা স্বপ্নদোষ হলে পুংলিঙ্গ হতে যা নির্গত হয়, তা হল বীর্য ৷ যৌন উত্তেজনার কারণে পানির মত পাতলা বীর্য যা অল্প পরিমানে বের হয়, কিন্ত উত্তেজনা হ্রাস হয়না তাকে মযী বলে ৷ কোন কোন সময় প্রস্রাবের পূর্বে কিংবা পরে যে গাঢ় সাদা পানি বের হয় তাকে অদী বলে।বীর্য বের হলে গোসল ফরয হয় কিন্ত ম়যী বা অদী বের হলে অযু ভেঙ্গে যায় কিন্ত গোসল ফরয হয় না ৷
নারীদের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।সংগম বা সহবাস করলে সাধারনতঃ নারীদের বীর্যপাত হয় না। নারীর বীর্য বলে কোন কিছু নেই।তবে নারীদেরও মযী ও অদী বের হয়।কামভাব জাগলে নারীদের মযী বের হয়- যার জন্য যোনী পথ পিচ্ছিল হয়ে যায়।
_______________
ফরয গোসলের সঠিক নিয়মঃ
১.পবিত্রতা অর্জনের জন্য প্রথমে গোসল করার “নিয়ত” করে নিতে হবে। এরজন্য কোনো দুয়া পড়তে হবেনা বা মুখে কিছু বলতে হবেনা। শুধু গোসল শুরু করার পূর্বে ‘আমি পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করছি’, এই বিষয়টা অন্তরে খেয়াল থাকলেই হবে।
২.বিসমিল্লাহ’ বলে গোসল শুরু করা
৩.দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোওয়া। বুখারী ২৪৮
৪.পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা। বুখারী ২৫৭
৫.বাম হাতটি ভালভাবে ঘষে ধুয়ে নেওয়া। বুখারী ২৬৬
৬.নামাজের ওজুর মতো ভালভাবে পূর্ণরূপে ওজু করা। (দুই হাত তিনবার ধোওয়া, কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া, মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধোওয়া। মাথা মাসেহ করতে হবেনা।) এক্ষেত্রে শুধু পা দুটো বাকি রাখলেও চলবে, যা গোসলের শেষে ধুয়ে ফেলতে হবে। বুখারী ২৫৭, ২৫৯, ২৬৫
৭.মাথায় পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভালভাবে আঙ্গুল
দিয়ে ভিজানো। বুখারী ২৫৮
মহিলাদের বেনী না খুলেও গোড়া ভালভাবে ভিজলেই হবে। মুসলিম ৩৩০
৮.পুরো শরীরে পানি ঢালা; প্রথমে ডানে, পরে বামে।
বুখারী ১৬৮
৯.গোসলের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ধোওয়া। যদি গোসলের জায়গায় ময়লা বা নাপাক পানি থাকে । বুখারী ২৫৭
____________
মনে রাখতে হবেঃ
১. পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে
হবে।
২. মহিলাদের শুধু চুল ভেজানোই যথেষ্ট।
৩. উপরোক্ত নিয়মে গোসল করে নামায পড়তে চাইলে পুনরায় ওযু করতে হবেনা, যদিনা গোসলের সময় ওযু ভংগের কোনো কারণ ঘটে থাকে। গোসল করার মাঝখানে যদি ওযু ভংগের কারণ ঘটে তাহলে গোসলের পর নামায পড়তে চাইলে আবার ওযু করতে হবে। গোসলের পরে কাপড় চেঞ্জ করলে বা
হাঁটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে ওযু ভাংবেনা, এটা ওযু ভংগের কোন কারণ নয়।
রেফারেন্সঃ
সহীহ বুখারীঃ ১, ১৬৮, ২৪৩, ২৪৮, ২৫৭, ২৬৬, ২৮০
সহীহ মুসলিমঃ ৬২৫, ৬৩১, ৬৫০, ৬৫৬, ৬৭০, ৬৭৩
নাসায়ীঃ৪২২
ইবনে মাজাহঃ ৬৩৭
আবু দাউদঃ ২৪৩