ফজরের আগে ইস্তিগফার

হারিয়ে যাওয়া একটি ইবাদাত হলো ফজরের (আযানের) আগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া (ইস্তিগফার করা)। এটি তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ থেকে ভিন্ন ধরনের ইবাদাত। আর ইবাদাত তো এটাই যে, বান্দা বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করবে। আল্লাহ বলেন,

“আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেন। যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। তারা ধৈর্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। ” (সূরাহ আলে ইমরানঃ আয়াত ১৫-১৭)

আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেন “এবং যারা রাতের শেষ ভাগে ইস্তিগফার করে।” ‘সাহার’ হলো রাতের শেষাংশ, ঠিক ফজরের আগের সময়। এজন্য সুহুরকে সুহুর বলা হয়, কারণ তা রাতের শেষে করা হয়। কিয়ামুল লাইল, কুরআন তিলাওয়াত এবং যিকির আযকারের পর আপনি হয়তো এখন পরিবারের সাথে সেহেরী করার জন্য প্রস্তুত। এর মধ্যেই এসব থেকে একটু সরে গিয়ে ফজরের ঠিক আগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এর ফযিলত এত বেশি যে, আপনার উপর এই আয়াত প্রযোজ্য হবে-“এবং যারা রাতের শেষ ভাগে ইস্তিগফার করে।”

রমাদান হলো আরো কিছু নতুন ইবাদাত শুরু করা ও নিজের উন্নতি ঘটানোর এক ঈমানী থেরাপি। ধীরে ধীরে এটা শুরু করুন। ফজরের তিন বা পাঁচ মিনিট আগে ইস্তিগফারের জন্য বসে পড়ুন। আবার এই কথা শুনেই অতি উৎসাহী হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে এ কাজ করতে যাবেন না। কারণ এটা শয়তানের একটা চাল হতে পারে। কেউ হয়তো একটা ইবাদাতের ফযিলত শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়লো, শয়তান তখন তাকে এই কাজে দীর্ঘক্ষণ লাগিয়ে রেখে ইবাদাতের প্রতি তার সব শক্তি আর আগ্রহ শেষ করে ফেলে। ফলে সে এক রাত ইবাদাত করার পরেই সেই ইবাদাত ছেড়ে দেয়। ইবাদাত করা হলো নতুন গাড়ি কেনার মতো। দোকানদার আপনাকে বলে দিবে আস্তে আস্তে ইঞ্জিনের জড়তা কাটাতে। শুরুতেই সত্তর মাইল বেগে চালাতে শুরু করলে হবে না। আস্তে আস্তে শুরু করতে হবে। এক দিনে অনেক ইবাদাত করে পরদিন থেকে তা ছেড়ে দেওয়ার চাইতে নিয়মিত অল্প অল্প ইবাদাত করাই উত্তম।

সেহরির সময় অনেকেই হয়তো খাবার টেবিলে বসে অর্থহীন কথাবার্তা বলছে, এমন আলোচনা করছে যাতে বরং পাপের ভাগীদার হতে হয়। আপনি এসব আলোচনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে ইস্তিগফারে ব্যস্ত হয়ে যান। সত্তর থেকে একশ বার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন, যেভাবে রাসূল (ﷺ) পড়তেন। অথবা অন্য যে কোনোভাবে ইস্তিগফার করুন। আর এটাই হবে আপনার জীবনে এক নতুন ইবাদাতের সূচনা।
যেকোনো সময়েই ইস্তিগফার করা যায়। কিন্তু এই সময়টার ব্যাপারে আল্লাহ কুরআনে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। এটা করে আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারেন, যাদের প্রশংসা আল্লাহ কুরআনে করেছেন। এই আমলটি শুরু করুন, ইনশাআল্লাহ এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা পেয়ে যাবেন।

আল্লাহ বলেছেন,
“তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। ”
(সূরাহ নূহ: আয়াত ১০)

যারা ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। আপনার যদি আর্থিক সমস্যা থাকে, যদি নিঃসন্তান দম্পতি হয়ে থাকেন, ইস্তিগফার হলো এ সবকিছুর ঔষধ, কুরআনের স্পষ্ট আয়াত দ্বারা তা প্রমাণিত। আর এই ইস্তিগফারের উত্তম সময় হলো ফজরের আগে। আল্লাহ বলেন,
“আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।” (সূরাহ নূহ: আয়াত ১০-১২)

আপনি ক্ষমতা চান? সমাজে একটি ভালো পজিশনে যেতে চান বা চাকরিতে পদোন্নতি চান? ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন? আল্লাহর কসম! ইস্তিগফার করুন আর ফলাফল দেখুন।

ধূলিমলিন উপহার: রামাদান
শাইখ আহমাদ মুসা জিবরীল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *